
মাদরাসা ও জেনারেল শিক্ষার একই সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা এমন একটি আদর্শ প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাই, যারা দেশ, জাতি, রাষ্ট্র, সমাজ উন্নয়ন ও মানবতার কল্যাণে আগামী বিশে^ সিপাহসালারের ভূমিকা পালন করবে ইনশাআল্লাহ।
সমন্বিত দাওয়াহ নেসাব
যুগোপযোগী উন্নত দ্বীনী সিলেবাসের পাশাপাশি সকল শ্রেণিতে দাওয়াত ভিত্তিক দরসী কিতাবের সংযোজন জামিয়া কাশিফুল উলূম ঢাকা’র একটি ঐতিহাসিক কাজ। ইসলামের ইতিহাসে ‘ফুনূনে দাওয়াত’ বা দাওয়াহ পাঠ্যক্রমকে ধারাবাহিক নেসাবভুক্তকরণ বিশ^ব্যাপী ইসলামী শিক্ষাধারায় নতুন সংযোজন ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ এর রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। এই নেসাবের দ্বারা একজন শিক্ষার্থী প্রথমতঃ দুনিয়ার কল্যাণ, দ্বিতীয়তঃ আখেরাতের কল্যাণ হাসিল করবে। দ্বীনী শিক্ষাব্যবস্থাকে সংস্কার ও পুনর্গঠন করে একবিংশ শতাব্দির সময়োপযোগী একটি বাস্তবসম্মত কল্যাণমুখী সিলেবাস নিয়ে জামিয়া কাশিফুল উলূম ঢাকা পথচলা শুরু করেছে। ‘সমন্বিত দাওয়াহ নেসাব’ জাতির দ্বীন ও দুনিয়ার প্রয়োজন পুরা করার মতো পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাব্যবস্থা হিসাবে কাজ করবে ইনশাআল্লাহ।
আর ইলমে ওহির মূল উদ্দেশ্যই হলো আল্লাহর দিকে দাওয়াত। জামিয়া কাশিফুল উলূম ঢাকা’র ছাত্ররা কুরআন, হাদীস, ফিকাহ, বালাগাত, আরবী সাহিত্য সহ কওমী শিক্ষাধারার সকল ইলমি কিতাব অধ্যয়ন করবে দাওয়াতের নকশাকে সামনে রেখে। কারণ ইলমে ওহি প্রেরণের মূল উদ্দেশ্যই হলো দাওয়াতে ইলাল্লাহ। আম্বিয়া আ. এর মূল উদ্দেশ্যই ছিল দাওয়াত। আর ওরাসাতুল আম্বিয়াদের মূল কাজই হলো ইলমে ওহির মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ছায়ার নিচে সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈনদের রেখে গিয়েছিলেন, সেই মহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের উপর গোটা উম্মতে মুসলিমাকে পুনরায় তোলার জন্য এই সিলেবাসের নাম ‘সমন্বিত দাওয়াহ নেসাব” রাখা হয়েছে।
এই সিলেবাস ও কারিকুলাম
কেন যুগান্তকারী সমন্বিত?
সমগ্র উম্মাহর নেতৃত্ব দানে যোগ্য আলেম হিসাবে গড়ে তোলার মিশন নিয়ে র্দীঘদিনের গবেষণালব্ধ নিজস্ব সিলেবাস ও কারিকুলামের আলোকে ইতিহাস সৃষ্টিকারী যুগান্তকারী ‘সমন্বিত দাওয়াহ নেসাব’ নিয়ে পথচলা শুরু করেছি আমরা। আমরা মনে করি, উলামায়ে কেরাম যতদিন মসজিদ-মাদরাসার চার দেয়ালের দ্বীনী খেদমতের পাশাপাশি সমাজের সকল সেক্টরে নেতৃত্ব না দিবেন, ততদিন সেসব জায়গায় শরীয়ত, সুন্নত ও দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হবে না। আমরা বিশ্বাস করি, আহলে ইলমদের সমাজের সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্ব ও বিচরণ ছাড়া এই সমাজ, দেশ, জাতি ও উম্মাহর কাক্সিক্ষত পরিবর্তন সম্ভব নয়। সম্ভব নয় উম্মাহ বিনির্মাণ। একটি খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য যত শো’বার লোক তৈরি করা দরকার, ‘দরসে নেযামী’র মূল সিলেবাসে ফিরে গিয়ে আবার সেই রিজাল (ব্যক্তিত্ব) তৈরি করতে হবে; এর কোন বিকল্প নেই।
বাংলাদেশে র্দীঘদিন ধরে অনেক চিন্তাশীল উলামায়ে কেরাম ও শিক্ষাবিদগণ কওমী সিলেবাসে সমন্বিত সিলেবাসের কথা বললেও এখন পর্যন্ত প্লে থেকে দাওরায়ে হাদীস/মাষ্টার্স পর্যন্ত কওমী মাদরাসার সকল কিতাবের পরিপূর্ণ পাঠদানের পাশাপাশি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও কারিকুলাম এর আলোকে বাস্তসম্মত পাঠদান পদ্ধতি তৈরি করে কোন পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত সিলেবাস ও কারিকুলাম পেশ করেননি। আলহামদুল্লিাহ! আল্লাহ তা‘আলার অশেষ মেহেরবানী ও পরম দয়ায় অমরা এই পথচলা শুরু করেছি।
জামিয়া কাশিফুল উলূম ঢাকা দেশের একমাত্র ও প্রথম কোন প্রতিষ্ঠান, যে প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিক পাঠ্যক্রম, কারিকুলাম ও সিলেবাসের রূপরেখা তৈরি করেছে, আলহামদুল্লিাহ। এর সিংহভাগ দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামা ও বর্তমান মুসলিম বিশে^র আধুনিক বিশ^বিদ্যালয়গুলোর কারিকুলামের আদলে তৈরি করা। পাশাপাশি দরসে নেযামির গুরুত্বপূর্ণ সকল কিতাবের সমন্বয় সাধন করা হয়েছে গবেষণালব্ধ এই পাঠ্যক্রম, সিলেবাস ও কারিকুলামে। ইতোমধ্যে দারুল উলূম দেওবন্দ ও দারুল উলূম করাচিও এইচএসসি পর্যন্ত এই সমন্বিত সিলেবাসের পাঠদান শুরু করেছে।
দারুল উলূম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা হুজ্জাতুল ইসলাম কাসেম নানুতভী রহ. এর পূর্ণাঙ্গ নেসাব ও তা‘লিম ছিল আমাদের এই সমন্বিত দাওয়াহ নেসাবের অনুরূপ। এছাড়া কওমী শিক্ষাব্যবস্থা দীর্ঘদিন যাবৎ দরসে নেযামীর কেবল খÐিত কিছু কিতাব ও পাঠ্যক্রম দিয়ে পথ চলছে।
আমরা আমাদের আকাবির-আসলাফের শিক্ষাধারার আলোকে দরসে নেযামীর মূল পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে ফিরে যেতে চাই।
শায়খুল ইসলাম, কুতুবে আলম সৈয়দ হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর লিখিত ‘নেসাবে তা’লিম’ নামক কিতাবে জেনারেল শিক্ষা সংযোজনের পাশাপাশি প্রতি ৭ বছর অন্তর নেসাব সংস্কারের কথা লিখেছেন।
ফকীহুল উম্মাহ মাওলানা ইউসুফ বিন নূরী রহ. বলেছেন, ৪শ’ বছর আগে যে কারণে আলেমরা ফার্সি ভাষা শিখতেন, একই কারণে এখন তাদের উপর জরুরি হলো, ইংরেজী ভাষা শিক্ষা করা।
মুফতীয়ে আজম শফি রহ. বলেছেন, দেওবন্দ ও আলীগড় শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন স্বাধীন দেশের জন্য নতুন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা।
মুফাক্কিরে ইসলাম সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. লিখেছেন, সোনালী যুগের সর্বজনীন ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া ছাড়া এই উম্মাহর কাঙ্খিত পরিবর্তন ও মুক্তি সম্ভব নয়।
আমরা দেওবন্দের মূল সেই ধারায় আবার ফিরে যেতে চাই সোনালী যুগের সর্বজনীন ইসলামী শিক্ষার আলোকে যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী পথচলার শুভ সূচনা ইনশাআল্লাহ।